স্কুল পরিচিতি
দিনাজপুর জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৮৮৭ সালে ১.৯৩ একর জমির উপর তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা গিরীজানাথ রায় বাহাদুর কর্তৃক মাইনর স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি জেলা সদর হতে মাত্র ০২ (দুই) কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী গামী পাকা সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে রাজবাটী নামক মহল্লায় অবস্থিত। এর উত্তরে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, দক্ষিণে কৃষি ফার্ম, পূর্বে একটি জলাশয় এবং পশ্চিমে আবাদী জমি জমা সহ বিদ্যালয়টি অবস্থিত। দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজানাথের আমলে রাজবাড়ী সংলগ্ন এলাকায় জুবিলী মিডিল ভার্নিকিউলার স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মিডিল ভার্নিকিউলার স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পুর্বে স্কুলটি একটি পাঠশালা হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে দিনাজপুরের মহারাজার সার্বিক সাহায্যে পরিচালিত হতো। জানা যায় দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত রাজবাড়ীর কোষাগার থেকে স্কুলের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। ছাত্র বেতন সম্পর্কে দুধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। অনেকের বিবরণে বিগত শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানে ছাত্র বেতন ছিল না। আবার অনেকের মতে মিডিল স্কুল খোলার পর পরই এখানে ছাত্র বেতন চালু হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি কবে মিডিল স্কুলে পরিণত হয় তা বলা যায় না, তবে ১৮৯৪ সালে এটি মিডিল ভার্নিকিউলার স্কুল হিসেবে পরিচালিত ছিল। বিদ্যালয়টি ০১/০১/১৯৭০ সাল হতে পূর্নাঙ্গ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে বর্তমান কাল পর্যন্ত চালু আছে। বিদ্যালয়টি গত ০১/০১/১৯৮০ ইং সাল হতে প্রথম এম.পি. ও ভূক্ত হয়। EIIN No- 120726, এম.পি.ও কোড নং- ৭৮১১০১১৩০৬। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকাল হতে বলা যায় এটি দিনাজপুর জেলার একটি অতি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালের রাজশাসনের অবসান, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৮০ সালের আভ্যন্তরীণ কলহের কারণে বিদ্যালয়ের অতীত রেকর্ড পত্রাদি বিনষ্ট হলেও বিদ্যালয়ের প্রাচীন ভবনের ভিত্তি ফলক অনুসারে এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৮৭ ইং খ্রীস্টাব্দে বলে জানা যায়। সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার রাজ্যভিষেক উপলক্ষে তৎকালীন সমগ্র বৃটিশ সাম্রাজ্যে জুবিলী উৎসব উদ্যাপিত হয়। সম্রাজ্ঞীর রাজত্বকাল ৫০ (পঞ্চাশ) বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্রাজ্ঞীর সন্তুষ্টি বিধান কল্পে ১৮৮৭ ইং খ্রস্টাব্দে মহারাজা গিরীজানাথ রায় বাহাদুর কর্তৃক জুবিলী স্কুলটি ‘‘মাইনর’’ স্কুল হিসেবে স্থাপিত করেন। ১.৯৩ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি পাকা শ্রেণী কক্ষ ও প্রাচীর বেষ্টিত অবস্থায় বিদ্যমান। গত ২৯/০৫/১৯৭৬ ইং তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারের সমাজ সেবা অদিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত সমন্বিত অন্ধশিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। যার নামে .১২ শতাংশ জমি ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে গত ০৮/১২/২০০৩ ইং তারিখের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা বোর্ডের অনুমতিক্রমে ০.৪০ শতাংশ জমি মুক ও বধির শিক্ষার্থীদেও জন্য ‘‘দিনাজপুর বধির ইন্সটিটিউট এর নামে রেজিষ্ট্রি মূলে দান করা হয়। বর্তমানে ১.৫৩ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয় ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা অবস্থিত। বিদ্যালয়টি ১৮৮৭ ইং সালে প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে সেইসব শ্রেণীর মানুষের সন্তানদেরকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে, যারা সুবিধা বঞ্চিত, হত দরিদ্র, দিনমজুর, শ্রমিক অথবা সামান্য আয়ের বস্তিতে থাকা মানুষের সন্তানগণ। তাই বিদ্যালয়ের বেতন বা অন্যান্য ফি সমূহ শহরের অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় সর্বদাই কম বা সহনশীল পর্যায়ে রাখা হয়। বৃটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত এ বিদ্যালয় হতেই যে অর্জন গুলি সম্ভব হয়েছে তা সংক্ষেপে নিম্নরুপ (১) অধ্যাপক অবসর প্রাপ্ত ড: অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্দাথ বিদ্যার প্রধান এবং একুশের পদক প্রাপ্ত ১৯৪২/৪৬ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ালেখা করেছিলেন।(২) নিকুঞ্জ রায় অটোবীর সত্বাধিকারী ও বিশিষ্ট চিত্র শিল্পী ঢাকা আট কলেজ তিনি ও একই সনে পড়ালেখা করেছিলেন। (৩) রাজেন্দ্র নাথ রায় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র/ ছাত্রী এছাড়াও দেশের বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন পদে এবং সমাজের সর্বস্তরে বহু সংখ্যক ছাত্র/ছাত্রী কর্মরত ছিলেন এবং এখনও আছেন। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ২০১০ সালে অত্র বিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্র/ ছাত্রী জার্মানীতে নাট্যাভিনয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদ্যালয়ের সুনাম উদ্ভাসিত করে। নাটকটির নাম ছিল ‘‘ভাত-তরকারী’’ এনাটকের মাধ্যমে এদেশের উপ-জাতিদের জীবন যাত্রার বিশ্ব অঙ্গনে মান তুলে ধার হয়। ২০০৪ সালে ফ্রান্সের একটি দল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিনয় ‘‘এসিড ভায়োল্যান্স’’ নামক নাটকের অভিনয় দেখতে আগমন করেন এবং নাটকটি দেখে তাঁরা মুগ্ধ হোন। এছাড়া ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস সহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান গুলোতে অসংখ্যবার ১ম,২য় ও ৩য় স্থান অধিকারের গৌরব অর্জন করেছে। ক্রীড়াঙ্গনে জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের যথেষ্ঠ অর্জন রয়েছে। ২০০৩ সালে আন্ত:স্কুল ভলিবল চ্যাম্পিয়ান ২০০৫ ইং সালে ইয়ং টাইগারস ক্রিকেট টুনামেন্ট চ্যাম্পিয়ান। ২০০৮ সালে ক্রিকেট উপজেলা পর্যায়ে রানার্স আপ। এছাড়াও পি.এস.টি.সি দিনাজপুর স্বাস্থ্য অধিকার প্রকল্প ২০০৯/১০ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান এরকম অসংখ্য বার খেলাধূলা চ্যাম্পিয়ান ও রার্নাস আপ হবার গৌরব অর্জন করেছ। শুধু তাই নয় মন্ত্রি এম. পি, সচিব, উপসচিব অত্র বিদ্যালয়ের মাঠে পদধূলি দিয়েছেন। এখানে সাক্ষী হয়ে আছে অত্র এলাকার গ্রামবাসীগণ।
বিঃদ্র- বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ১ম শ্রেণী থেকে ৪র্থ শ্রেণী পরবর্তীতে ১৮৯৪ সাল হতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী এবং ১৯৭০ সালে মাধ্যমিক শ্রেণীতে রুপান্তরিত হয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে আশানুরুপ জনবল কাঠামো না থাকায় এবং সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলি না থাকায় প্রধান কারণ হিসেবে বিহ্নিত করা হয়। বিদ্যালয়টিতে গত ১২ সালের ডিসেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি মৌখিকভাবে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি না নেওয়া প্রসঙ্গে উত্থাপন করেন। ১৬/০১/২০১৩ ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১ম শ্রেণীকে বিলুপ্তি ঘোষনা এবং ২০১৪ সালে ২য় শ্রেণীকে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত রহিয়াছে।